রামচন্দ্র ঘাট : গৌরাঙ্গ ঘাট দেখতে চলুন ঃ-
উত্তর
২৪ পরগনার পানিহাটির রামচাঁদ ঘাট, গৌরাঙ্গ ঘাট সেনদের ঘাট স্পর্শ করে বহে
যাচ্ছে ভগবৎ-করুণার বিগলিত রূপে কুলসহরিণী গঙ্গা আর গঙ্গার ওপেরে লক্ষ
লক্ষ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে প্রবাহিত হচ্ছে ভক্তিভাবের স্ফুরণ,
ভাব-ভক্তির মলয়। আর এসব কিছুর সাক্ষ্য বহন করছে গৌরাঙ্গ ঘাটের সেই অক্ষয়
বট।
অগনিত মানুষের প্রশ্ন জাগে, বটবৃক্ষ তুমি কি সৌভাগ্যবান। তোমার ছায়ায় কত মহাপুরুষের বিশ্রামস্থান।
প্রায়
পাঁচশো বছর আগে পানিহাটি গঙ্গা তীরে মহাপ্রভূ শ্রী চৈতন্যদেব পা রেখে
ছিলেন। এই গঙ্গার অনতি দূরে পানিহাটি বা পানটি গ্রামে বাস করতেন রাঘব
পন্ডিত। এই সময় নাম সংকীর্ত্তনে পেনটি গ্রাম মুখোরিত হয়ে ওঠে। পেনটি হয়
দ্বিতীয় নবদ্বীপ।
বট গাছটির কাছেই আছে চৈতন্য
মন্দির। তার সামনে নাট মন্দির। এই নাট মন্দিরে প্রত্যহ ভাগবত পাঠ ও লীলা
কীর্ত্তন হয়ে থাকে। এই নাট ম্নদিরে নিত্য পূজা করেন বঙ্কুবিহারী
বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়। তবে সব চেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা
ত্রোয়দশী তিথিতে ' দন্ড মহোৎসব'। এই মহোৎসব শুরু করেন মহাপ্রভূর একান্ত
অনুগত শ্রীপাদ নিত্যানন্দ। এর পিছনে এক কাহিনী বিদ্যমান।
কাহিনীটি
এই রকম-- সপ্তগ্রামের জমিদির গৌবর্ধন দাসের পুত্র রঘুনাথ দাস কৃষ্ণভক্ত।
পানিহাটিতে মহাপ্রভুর পর যখন শ্রী পাদ নিত্যানন্দ আগমণ করেন তখন রঘুনাথ
দাসও নৌকা করে সপ্তগ্রাম থেকে পানিহাটির গঙ্গা তীরে এসে হাজির হন। তিনি
দেখেন পূর্বের হেই উল্লিখিত বটগাছের তলায় শ্রী পাদ নিত্যানন্দ
কৃষ্ণভক্তদের সাথে হরিনাস সংকীর্ত্তন করছেন। তিনি অর্থাৎ রঘুনাথ দাস আড়ালে
সরে থাকেন। তাঁর আগমণ বার্ত্তা শ্রীপাদের কানে গেলে তিনি তাকে কাছে ডাকেন
এবং বলেন আড়ালে সরে থাকার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি হচ্ছে চিঁড়ে
সন্দশ চিনি দিয়ে সমবেত অতিথিদের সেবা করতে হবে। শ্রীনাথ দাস ও শ্রীপাদ
নিত্যানন্দ এই আজ্ঞা মাথায় পেতে পালন করেন। এই মহোৎসব ছত্রিশ জাতি এক
পোঙতিতে বসে ভোজন করেছিলেন যা সে যুগের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। তখন থেকেই চলে
আসছে দন্ড মহোৎসব বা চিড়ে মহোৎসব। আজ অবধী পানিহাটির প্রশাসন এবং স্থানীয়
অধিবাসীগণের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতি বছর নিদ্দিষ্ট তারিখে এই উৎসব পালিত হয়
বসে মেলা।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, গান্ধিজী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এসে ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ,
রামকৃষ্ণদেব এসে ছিলেন। কবিগুরু রবীন্দনাথ টানা দু-বছর এখানে ছিলেন।
পানিহাটি পুরসভা মন্দিরটি সংস্কারর করেন।
কিভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে সোদপুর স্টেশান। এখান থেকে অটোয় রামচাঁদ ঘাট।
0 মন্তব্যসমূহ