কলকাতার কাছে হুগলি জেলার দ্বারহট্টা যেতে পথে বাঁধবে গাংপুর রাবড়ি গ্রাম।
বালি
হয়ে আরামবাগ পৌঁছে মশাট মোড় থেকে আঁইয়া হয়ে গাংপূর রাবড়ি গ্রাম। আসল নাম
গাংপুর কিন্তু প্রচলিত মানুষের মুখে মুখে একই কথা রাবড়ি গ্রাম। এই গ্রামের
৩০/ ৪০ টি পরিবারে রাবড়ি তৈরি হয়। সেই রাবড়ি কলকাতা এবং বিভিন্ন বাজারে
সাপ্লাই হয়।
গাংগপুর বাজারে দেখা যাবে কি ভাবে রাবড়ি প্রস্তুত হয়। আমের রাবড়ি, খেজুর গুড়ের রাবড়ি, সুগার ফ্রি রাবড়ি। রাবড়ি ছাড়া তৈরি হয় সরভাজা।
গজার
মোড় থেকে দ্বারহাট্টার মনকামোনা ইকো রিসর্ট দেখা যাবে। মাটি বালি তুষ
দিয়ে গড়ে উঠেছে রিসর্টটি। সিমেন্টের ব্যবহার নেই বল্লেই হয়। এই কারণে ঘরের
ভিতর শীত গ্রীষ্ম সব সময় একই উষ্ণতা বিরাজ করে। জানা যায় আপ্লাস জার্মানীর
অংশে এমনধারা কিছু বাড়ির গঠনশৈলী দ্বারা প্রভাবিত এই নির্মাণ। ঘরের ভিতরে
ব্যবহৃত টেবিল চেয়ার তৈরি হয়েছে সাইকেল ও স্কুটির টায়ার ব্যবহার করে।
রিসর্টের
বাইরে রয়েছে চার বিঘা জমির উপর পুকুর গাছপালা, সুইমিং পুল, রেস্তোরা
ইত্যাদি। রিসর্টের পাশেই আছে দুটি মন্দির। রাজরাজেশ্বর ও দ্বারিকাচন্ডি।
দুটি মন্দিরেরই প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন সিংহরায় বাড়ির জমিদাররা। প্রাচীন
ঐতিহ্যশালী এই পরিবারটির সমৃদ্ধি ও বাংলাযোগের ইতিহাস শুরু ষোড়শ শতকের ভাগ
থেকে। তখন দিল্লীর মসনদে মুঘোল সম্রাট আকবর। আর এই গোটা অঞ্চলের শাষনকর্তা
বা মনসেফদার হচ্ছে মানসিংহ। এই সময় সুদুর রাজস্থান থেকে প্রচুর মানুষ
এখানে চলে আসেন।
তাঁদের অনেকে পাকাপাকি ভাবে বাংলায়
থেকে যান। আবার বিভিন্ন পরগণায় জমিদার হিসাবে নিযুক্ত হন বিভিন্ন এলাকায় বা
পরগণায়। সিংহরায়রা এসেছিলেন রাজস্থান থেকে। প্রথমে সিঙ্গুর পরে
বিভিন্নস্থানে এরা থিতু হন এবং এই অঞ্চলের জমিদারীও লাভ করেন।
ফসলের
জমি তারপরে জলে বক, পানকৌড়ি, হাঁসের জগতের পাশ দিয়ে যেয়ে দেখা যাবে
রাজরাশ্বরির মন্দির। ১৭২৮ খ্রষ্টাব্দে নির্মিত ঐতিহ্যমন্ডিত রাজরাজেশ্বর
মন্দির সংরক্ষণ করেন আর্কোলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া।
সিংহরায়
বংশের কুল দেবতা রাজরাজেশ্বর শালগ্রাম শীলারূপে পূজিত হন এখানে। উঁচু
ভিত্তিভূমির উপর নির্মিত আটচালা শৈলীতে টেরাকাটা মন্দির। উচ্চতা ৫০ ফুট।
পূর্ব মুখি দ্বার বিশিষ্ট তিন মুখি খিলান। মন্দিরের গায়ে, বারান্দায়
সর্বত্র পোড়ামাটির অনবদ্য কাজ। তাতে রয়েছে রাম-রাবণের যুদ্ধ, কালী,
দূর্গা, শিব ইত্যাদি হিন্দু দেব দেবির ছবি সব। তাছাড়া পৌরাণিক ছবির
পাশাপাশি গড়গড়ায় ধূমপান রত জমিদার, ফিরিঙ্গি সৈন্যদের ফটো সমূহ। মন্দির
চত্বরটি বিরাট এলাকা নিয়ে আছে। নির্জন পরিবেশ। মন্দির সীমানর বাইরে পরপর
তিনটি ছোট ছোট মন্দির দেখা যায়।
দ্বরিকাচন্ডী মন্দিরের রাস্তাটি গ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। দিঘীতে মাছ ধরার ধূম পড়ে প্রায় সব সময়।
দ্বারিকাচন্ডী
থেকে গ্রামের নাম হয়েছে দ্বারহাট্টা। ১৭১৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত পোড়া
মন্দিরের জায়গায় এখন নতুন মন্দির নির্মিত হয়েছে। নতুন করে দ্বারিকাচন্ডীর
মন্দির নির্মাণ হয়েছে। মন্দিরের পাশে একটি পুকুর ও একটি শিব মন্দির দেখা
যায়। দ্বারিকাচন্ডীর গর্ভগৃহে চতুর্ভূজা দূর্গা মূর্তি রয়েছে। সঙ্গে
লক্ষ্মী-সরস্বতী- কার্ত্তিক-গণেশের মূর্তি বিদ্যমান। তবে বাহন সিংহ বা
মহিসাশুরের কোন ছবিই নেই। মন্দিরে দুবেলা পূজাপাঠ, আরতি ঠিকঠাক চলে আসছে।
রীতি অনুযায়ী মহালয়ার পরদিন পূজা আরম্ভ হয়। সেই উপলক্ষে ঘটা করে ভোগ, পূজো,
হোম, যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে যোগদিতে গ্রামের সব মানুষ এই মন্দির
প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়।
কি
ভাবে যাবেন ঃ--- ট্রেনে হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে নামতে হবে হরিপাল স্টেশানে।
শ্টেসান থেকে অটোয় দ্বারহাট্টা। বাসে ধর্মতলা থেকে আসা যাবে দ্বারহট্টায়।
কোথায় থাকবেন ঃ--- মনদ্বারিকা ইকো রিসর্ট। আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠ। নটরাজ ট্যুরিজম প্রপার্টি। তারকেশ্বর টুরিষ্ট লজ।
![]() |
0 মন্তব্যসমূহ